বাংলাদেশে সরকারিভাবে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন বহু তরুণের হৃদয়ে জ্বলজ্বল করে। কেউ দেখে বাবার আদর্শ, কেউ দেখে সমাজে অবদান রাখার ইচ্ছে। ঠিক সেই অনুভূতি থেকেই প্রাইমারি শিক্ষক নিয়োগ ২০২৫ সার্কুলার নিয়ে মানুষের আগ্রহ তুঙ্গে। এই সার্কুলার মানে শুধু একটি চাকরি নয়, বরং ভবিষ্যৎ প্রজন্ম গঠনের সুযোগ। এই লেখায় আমরা জানবো নিয়োগ প্রক্রিয়া, যোগ্যতা, আবেদনের ধাপ, প্রস্তুতির কৌশল, আর থাকবে বাস্তব জীবনের গল্প—সব মিলিয়ে একদম বন্ধুর মতো পরামর্শ।
কেন এই চাকরিটা এত আকর্ষণীয়?
প্রাইমারি শিক্ষকতা মানে শুধু পাঠদান নয়। এটি একটি চিরন্তন দায়িত্ব—একটি কোমল হৃদয় গড়ে তোলার। যাদের ছোটবেলায় শিক্ষকের অনুপ্রেরণায় জীবন বদলে গেছে, তারাই বোঝে এই পেশার গুরুত্ব। প্রাইমারি শিক্ষক নিয়োগ ২০২৫ সার্কুলার তাই শুধু নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি নয়, এটি এক ধরণের সামাজিক প্রতিশ্রুতি।
আমার এক বান্ধবী, ফারজানা, ঢাকার এক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছেন। শুনেছি তার ছাত্ররা আজো “আপু” বলে ফোন করে, পরীক্ষার ফল জানায়। এটা কেবল একটা চাকরি হলে এমন হতো না। এটা আত্মিক বন্ধনের কাজ।
সার্কুলারের মূল তথ্য এক নজরে (টেবিল আকারে)
বিষয় | বিবরণ |
সার্কুলার প্রকাশের তারিখ | আনুমানিক জুন – জুলাই ২০২৫ |
আবেদন শুরুর তারিখ | সার্কুলার প্রকাশের পরপরই |
সর্বশেষ আবেদনের তারিখ | প্রকাশের ২৫-৩০ দিন পর |
মোট পদ | প্রায় ৪৫,০০০ (অনুমান) |
শিক্ষাগত যোগ্যতা | ন্যূনতম স্নাতক (যেকোনো বিভাগ) |
বয়সসীমা | ২১ থেকে ৩০ বছর (আবেদন শুরুর তারিখ অনুযায়ী) |
পরীক্ষার ধরণ | MCQ ও লিখিত, পরে ভাইভা |
কর্মস্থল | দেশের বিভিন্ন জেলার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় |
প্রয়োজনীয় যোগ্যতা ও মানদণ্ড
প্রথমেই বলে নেই, প্রাইমারি শিক্ষক নিয়োগ ২০২৫ সার্কুলার এ আবেদন করতে হলে ন্যূনতম স্নাতক পাশ হতে হবে। এটা হতে পারে আর্টস, কমার্স বা সায়েন্স যে কোনো বিভাগ থেকে। তবে আপনার কমিউনিকেশন স্কিল, শিশুর সঙ্গে আচরণ করার ক্ষমতা ও ধৈর্য্য থাকতে হবে—এই জিনিসগুলো অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
বয়সসীমাও বেশ গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণ প্রার্থীদের জন্য ৩০ বছর এবং মুক্তিযোদ্ধা/বিভিন্ন কোটার ক্ষেত্রে ৩২ বছর পর্যন্ত সুযোগ থাকে। এক্ষেত্রে যাদের জন্ম ১৯৯৫ বা তার পরে, তারা বেশ সুবিধাজনক অবস্থানে।
আবেদনের ধাপ এবং কীভাবে করবেন
এখনকার দিনগুলোতে সব কিছুই অনলাইনে। তাই আবেদনও অনলাইনেই করতে হবে dpe.teletalk.com.bd এই ওয়েবসাইট থেকে। আবেদন ফর্ম পূরণ করার সময় আপনার সঠিক তথ্য দিতে হবে—NID, শিক্ষাগত সার্টিফিকেট অনুযায়ী নাম, ঠিকানা ইত্যাদি।
আবেদন ফি সাধারণত ১১০ টাকা বা তার আশেপাশে হয় এবং তা Teletalk এর মাধ্যমে জমা দিতে হয়। অনেক সময় দেখা যায়, ছাত্ররা ফর্ম পূরণ করে কিন্তু ফি জমা দিতে ভুলে যায়, যার ফলে আবেদন বাতিল হয়ে যায়। তাই সাবধানে সব ধাপ শেষ করতে হবে।
পরীক্ষার প্রস্তুতির কিছু ভেতরের টিপস
সাফল্য একদিনে আসে না। প্রাইমারি শিক্ষক নিয়োগ ২০২৫ সার্কুলার এ সফল হতে চাইলে প্রস্তুতি শুরু করতে হবে এখনই। প্রশ্নপত্রের ধরন সাধারণত চারটি বিষয়ে বিভক্ত থাকে:
- বাংলা
- গণিত
- ইংরেজি
- সাধারণ জ্ঞান
এখন ধরুন আপনি গণিতে দুর্বল। তাহলে প্রতিদিন একটা করে অধ্যায় ধরুন। ইউটিউব, ফেসবুক গ্রুপ, কিংবা মোবাইল অ্যাপস থেকেও সাহায্য নিতে পারেন। মনে রাখবেন, বেসিক ক্লিয়ার থাকলে কঠিন প্রশ্নও সহজ হয়ে যায়।
আমার এক বন্ধু রাকিব, গতবার শুধু গণিতে ভালো করার জন্য একটি ছোট গ্রুপে পড়া শুরু করেছিল। সে বলেছিল, “প্রথমে একটু ভয় লাগত, কিন্তু এক মাস পর মনে হচ্ছিল আমি গণিতকে জয় করে ফেলেছি!”
নিজের প্রস্তুতির এক ঝলক (ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা)
আমি যখন প্রাইমারিতে আবেদন করেছিলাম ২০২৩ সালে, তখন প্রতিদিন সকাল ৭টা থেকে ৯টা পড়তাম। একটা নোটবুক বানিয়েছিলাম, যেখানে প্রতিদিন নতুন শেখা জিনিসগুলো লিখতাম। রাতে সেটা আবার রিভিশন দিতাম। কেউ বলে দিনে ১০ ঘণ্টা পড়তে হবে, আমি বলি—নিয়মিত ২ ঘণ্টা হলে যথেষ্ট, যদি সেটা মনোযোগ দিয়ে করা যায়।
একটা কথা ভুলে গেলে চলবে না—এই চাকরির জন্য প্রতিযোগিতা ভয়ংকর! লাখ লাখ মানুষ আবেদন করবে। কিন্তু আপনি যদি নিজের উপর বিশ্বাস রাখেন, তবে কেউ আপনাকে থামাতে পারবে না।
ভাইভা প্রস্তুতি: এক কথায় চূড়ান্ত যুদ্ধ!
লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে সামনে আসে ভাইভা, যেটি অনেকের কাছে সবচেয়ে কঠিন ধাপ। অথচ সঠিক প্রস্তুতি থাকলে এটাও হয়ে উঠতে পারে এক দারুণ অভিজ্ঞতা। প্রাইমারি শিক্ষক নিয়োগ ২০২৫ সার্কুলার অনুযায়ী, ভাইভাতে মূলত আপনার আচরণ, আত্মবিশ্বাস, সাধারণ জ্ঞান এবং শিক্ষাদানের যোগ্যতা যাচাই করা হয়।
প্রশ্ন হতে পারে, “আপনি কেন শিক্ষক হতে চান?” বা “শিক্ষার্থীদের শৃঙ্খলা বজায় রাখতে আপনি কী করবেন?” এর উত্তরগুলো আগে থেকেই চিন্তা করে তৈরি রাখা ভালো। নিজের ভাষা সহজ রাখুন। হাসিমুখে কথা বলুন। আর পোশাকে ও ব্যবহারেও যেন শালীনতা থাকে।
ভাইভা বোর্ডে আমি গিয়েছিলাম সাদা পাঞ্জাবি আর কালো প্যান্ট পরে। ভীষণ টেনশন ছিল, কিন্তু বোর্ডের একজন সদস্য যখন বললেন, “আপনি আত্মবিশ্বাসী, এটা খুব ভালো,” তখন মনে হয়েছিল আমি ইতিমধ্যেই জিতে গেছি!
জেলাভিত্তিক পদের হিসাব ও বণ্টন
প্রাইমারি শিক্ষক নিয়োগ ২০২৫ সার্কুলার এ জেলার ভিত্তিতে পদের বণ্টন হয়ে থাকে। অর্থাৎ আপনি যেই জেলায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন, সেখান থেকেই আপনি আবেদন করতে পারবেন। এক জেলা থেকে অন্য জেলায় আবেদন করার সুযোগ সাধারণত থাকেনা, বিশেষ করে যদি কোটায় না পড়েন।
এই নিয়মটা আসলে ভালো। কারণ এতে শিক্ষক নিজ এলাকা বা পরিচিত পরিবেশে কাজ করতে পারেন, যা শিশুর সঙ্গে সংযোগ গড়ে তুলতে সাহায্য করে।
তবে হ্যাঁ, কিছু জেলাতে পদের সংখ্যা বেশি হয় (যেমন চট্টগ্রাম, সিলেট), আবার কিছু জেলায় তুলনামূলক কম হয়। তাই সার্কুলার প্রকাশ হওয়ার পর প্রথমেই নিজের জেলার তথ্য দেখে নিতে হবে—পদের সংখ্যা, প্রতিযোগিতা কতটা তীব্র হতে পারে ইত্যাদি।
পছন্দের বিদ্যালয় বাছাইয়ের কৌশল
আপনি হয়তো ভাবছেন, “আমি কি আমার ইচ্ছেমতো স্কুল পছন্দ করতে পারবো?” উত্তর হচ্ছে—আংশিক হ্যাঁ। প্রাইমারি শিক্ষক নিয়োগ ২০২৫ সার্কুলার অনুযায়ী, একবার আপনি নির্বাচিত হলে, এরপর DPE (Directorate of Primary Education) কর্তৃপক্ষ আপনাকে কর্মস্থল বাছাইয়ের সুযোগ দেয়।
তবে এই বাছাই জেলা ও ইউনিয়নের ভিত্তিতে হয়, এবং আবেদনকারীর মেধাক্রম অনুযায়ী পছন্দ পূরণ হয়। তাই মেধার অবস্থান যত ভালো হবে, আপনার পছন্দের স্কুলে সুযোগ পাওয়ার সম্ভাবনাও তত বেশি।
এখানে একটা টিপস—নিজের এলাকা ভালো করে চিহ্নিত করে রাখুন। কোন ইউনিয়নে স্কুলগুলো ভালো, পরিবেশ কেমন, যাতায়াত কেমন, সেসব আগে থেকেই রিসার্চ করে রাখুন।
শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতির রোডম্যাপ
পরীক্ষার আগের এক-দুই সপ্তাহ মানেই যুদ্ধের সময়। এই সময় প্যানিক নয়, বরং স্ট্র্যাটেজিক রিভিশন চাই। আপনি যদি প্রাইমারি শিক্ষক নিয়োগ ২০২৫ সার্কুলার অনুযায়ী পুরো সিলেবাস ইতিমধ্যে কভার করে থাকেন, তাহলে এখন দরকার—
- সংক্ষিপ্ত নোট রিভিশন
- বিগত বছরের প্রশ্ন অনুশীলন
- প্রতিদিন মডেল টেস্ট দেওয়া
- ভুলের পয়েন্টগুলো চিহ্নিত করে শুধরে ফেলা
একটা ছেলের কথা বলি, নাম ছিল মেহেদী। সে পরীক্ষার আগের সপ্তাহে শুধু বিগত পাঁচ বছরের প্রশ্নগুলোর উত্তর লিখে লিখে প্র্যাকটিস করেছিল। ফলাফল? লিখিত পরীক্ষায় পুরো জেলা র্যাংকিং-এ সে ছিল প্রথম পাঁচে।
আর একটা গুরুত্বপূর্ণ টিপস—পরীক্ষার আগের রাতে ভালো করে ঘুমান। আপনার মন ও শরীর দুটোই রিফ্রেশ থাকতে হবে।
ভবিষ্যতের পথচলা: প্রাইমারি শিক্ষকতার ক্যারিয়ার রোডম্যাপ
প্রাথমিক শিক্ষকতা মানেই কি এক জায়গায় আটকে থাকা? একদম না! প্রাইমারি শিক্ষক নিয়োগ ২০২৫ সার্কুলার অনুযায়ী যারা নিয়োগ পাবেন, তাদের জন্য ভবিষ্যতে অনেক সম্ভাবনা খুলে যায়।
নিয়োগের পর প্রথমে আপনার পোস্ট হবে সহকারী শিক্ষক হিসেবে। এরপর নির্দিষ্ট সময় পর (৫ বছর বা তার বেশি), আপনি হতে পারেন সিনিয়র শিক্ষক, তারপর প্রধান শিক্ষক। চাইলে শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজে কাজ করার সুযোগ, কিংবা প্রশাসনিক দপ্তরে পোস্টিংয়েরও সুযোগ আছে।
আর যদি উচ্চশিক্ষা করেন, আপনি চাইলে শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে প্রশিক্ষক হিসেবেও কাজ করতে পারেন।
এই পেশা আপনাকে শুধু সমাজে সম্মানই দেয় না, বরং মানসিক তৃপ্তিও দেয়। প্রতিদিনের কাজেই আপনি অনুভব করবেন—হ্যাঁ, আমি আজ কারো জীবনে আলো এনেছি।
শেষ কথা: স্বপ্নটা এখন হাতের মুঠোয়
এই পুরো আর্টিকেল জুড়ে আমরা ঘুরে এলাম প্রাইমারি শিক্ষক নিয়োগ ২০২৫ সার্কুলার নিয়ে। শুরু করেছিলাম স্বপ্ন নিয়ে, আর শেষ করলাম বাস্তব রোডম্যাপ দিয়ে। আপনি যদি সত্যিই শিক্ষক হতে চান, তাহলে এই সার্কুলারকে ছোট করে দেখবেন না। এখানে শুধু চাকরি নেই, আছে দায়িত্ব, ভালোবাসা, সম্মান—আর একটা জীবন গড়ার অনুপ্রেরণা।
আজ যারা আপনার ক্লাসে বসে “আ ব ক খ” শিখবে, কাল তারা হবে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার কিংবা হয়তো লেখক। আর তাদের পেছনের ছায়া হিসেবে থাকবেন আপনি।
শুভকামনা রইলো আপনার প্রাইমারি শিক্ষক নিয়োগ ২০২৫ যাত্রার জন্য। বিশ্বাস রাখুন নিজের উপর। আপনি পারবেন!
সকল চাকরির আপডেট তথ্য পেতে আমাদের সাথে থাকুন।

Welcome to BD Govt Job Circulars – Your Trusted Source for All Government Job Updates in Bangladesh!