বাংলাদেশে পুলিশ কনস্টেবল হওয়া কেবল একটা চাকরি নয়, এটা যেন একটা দায়িত্ব, একটা সম্মান। গ্রামের মেঠোপথ হোক কিংবা শহরের ব্যস্ত সড়ক—যেখানেই পুলিশ দেখা যায়, একটা আস্থা জন্মায় মানুষের মনে। তাই তো প্রতিবছর হাজার হাজার তরুণ-তরুণী এই পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগ ২০২৫ সার্কুলার এর আশায় দিন গোনে। আমি নিজেও এমন অনেকের স্বপ্নের কথা জানি, যারা ছোটবেলা থেকেই পুলিশের পোশাক পরে দেশের সেবা করার স্বপ্ন দেখে আসছে।
এবারের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি নিয়ে এসেছে অনেক পরিবর্তন, কিছু নতুন সুযোগ, আর কিছু চ্যালেঞ্জও। চলুন, সহজ ভাষায়, বন্ধুর মতো করে সবকিছু বিশ্লেষণ করি। যেন আপনি প্রস্তুতি নিতে পারেন গুছিয়ে, আত্মবিশ্বাস নিয়ে।
নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির মূল তথ্য এক নজরে
পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগ ২০২৫ সার্কুলার প্রকাশিত হয়েছে এপ্রিল মাসের শুরুতে। এবার মোট ৬০০০ কনস্টেবল নিয়োগ দেওয়া হবে। এর মধ্যে পুরুষ ও নারী উভয়ই আবেদন করতে পারবেন।
চলুন টেবিলের মাধ্যমে একবার দেখে নেওয়া যাক—
বিষয় | তথ্য |
পদের নাম | পুলিশ কনস্টেবল |
মোট পদসংখ্যা | ৬০০০ জন |
আবেদন শুরুর তারিখ | ৩ এপ্রিল ২০২৫ |
আবেদনের শেষ সময় | ৭ মে ২০২৫, রাত ১১:৫৯ মিনিট |
বয়স | ১৮ থেকে ২০ বছর (১ এপ্রিল ২০২৫ অনুযায়ী) |
শিক্ষাগত যোগ্যতা | এসএসসি বা সমমান পাশ |
উচ্চতা (পুরুষ) | ৫ ফুট ৬ ইঞ্চি |
উচ্চতা (নারী) | ৫ ফুট ২ ইঞ্চি |
বুকের মাপ (পুরুষ) | ৩১ ইঞ্চি (ফুলিয়ে ৩৩ ইঞ্চি) |
চোখ | ৬/৬ |
প্রাথমিক বেতন | ৯,০০০ – ২১,৮০০ টাকা (গ্রেড ১৭) |
এই টেবিল দেখে আপনি যদি ভাবেন, “ওরে বাবা, এত নিয়মকানুন!” — ভয় পাবেন না। একটু মনোযোগ আর নিয়মিত অনুশীলন থাকলে আপনি অনায়াসেই পার হয়ে যেতে পারেন।
কে কে আবেদন করতে পারবেন? যোগ্যতার মানদণ্ড
এই পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগ ২০২৫ সার্কুলার অনুযায়ী, যেকোনো বাংলাদেশি নাগরিক আবেদন করতে পারবেন। তবে কিছু যোগ্যতা অবশ্যই থাকতে হবে। যেমন:
- ন্যূনতম এসএসসি পাস হতে হবে। গ্রেড যাই হোক, পাস করলেই হবে।
- বয়স ১৮ থেকে ২০ বছরের মধ্যে হতে হবে। কেউ যদি মার্চে ১৮ হয় বা মে মাসে ২১ হয়, তাহলে দুর্ভাগ্যবশত সে আবেদন করতে পারবে না।
- শারীরিক যোগ্যতা খুব গুরুত্বপূর্ণ। উচ্চতা, ওজন, চোখের দৃষ্টি—সব কিছু যাচাই করা হবে।
আমি নিজে একজন বন্ধুর কথা বলি, যার উচ্চতা ঠিক ৫ ফুট ৫.৫ ইঞ্চি ছিল। মাত্র অর্ধ ইঞ্চির জন্য সে বাদ পড়ে যায়। অথচ সে দৌড়ে, লিখিত পরীক্ষায় দারুণ করেছিল। তাই আমি বলব, শারীরিক মাপজোখে কনসার্ন থাকলে আগে থেকেই একটু খেয়াল রাখুন।
আবেদন পদ্ধতি: সহজ আর ডিজিটাল
আগে ছিল খাতা-কলম, এখন সব ডিজিটাল। এবারের পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগ ২০২৫ সার্কুলার অনুযায়ী, আবেদন করতে হবে www.police.teletalk.com.bd ওয়েবসাইটের মাধ্যমে।
প্রক্রিয়াটা এমন:
- ওয়েবসাইটে ঢুকে আবেদন ফর্ম পূরণ করতে হবে।
- ছবি (৩০০x৩০০ পিক্সেল) এবং স্বাক্ষর (৩০০x৮০ পিক্সেল) আপলোড করতে হবে।
- আবেদন ফি মাত্র ৩০ টাকা, যা টেলিটকের মাধ্যমে পাঠাতে হবে।
এখানে একটা জিনিস মনে রাখতে হবে—যেকোনো ভুল তথ্য দিলে আবেদন বাতিল হবে। তাই তথ্যগুলো একবার না, দুইবার যাচাই করে দিন।
আমি জানি অনেকেই সাইবার ক্যাফেতে গিয়ে ফর্ম পূরণ করে। সেখানে ভুল হবার সম্ভাবনা বেশি। চেষ্টা করুন নিজেই বা পরিবারের কাউকে নিয়ে বসে ফর্ম পূরণ করার।
শারীরিক সক্ষমতা যাচাই: সাহস আর শক্তির পরীক্ষা
প্রথম ধাপে থাকবে শারীরিক সক্ষমতা যাচাই। এখানে দেখবে:
- দৌড়ানো
- লাফ দেওয়া
- দড়ি বেয়ে ওঠা
- সোজা লাইনে হাঁটা
পুরুষদের জন্য ১.৬ কিলোমিটার দৌড় ৬ মিনিটে শেষ করতে হয়, নারীদের জন্য সময় একটু বেশি।
এই জায়গাটাতেই অনেকেই বাদ পড়ে যায়। তাই এখন থেকেই প্রস্তুতি শুরু করুন। প্রতিদিন সকালে হাঁটতে যান, দৌড়ান, একটু করে শরীরকে অভ্যস্ত করুন।
একটা বিষয় মনে রাখবেন—এটা কোনো জিম কম্পিটিশন নয়, তবে পুলিশে কাজ করতে হলে ফিট থাকতে হবেই। কারণ কাজটা সহজ না, অনেক চ্যালেঞ্জের।
লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা: বুদ্ধিমত্তার আসল পরীক্ষা
যারা শারীরিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হবেন, তাদের ডাকা হবে লিখিত পরীক্ষার জন্য। বিষয়গুলো সাধারণত:
- বাংলা
- ইংরেজি
- গণিত
- সাধারণ জ্ঞান
আমি আগের বছর যারা পাশ করেছে, তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা বলেছে, প্রশ্ন খুব কঠিন না, কিন্তু সময় বাঁচিয়ে সব প্রশ্ন দেওয়া চ্যালেঞ্জিং।
তাই সাজেশন হলো:
- প্রতিদিন একঘণ্টা সময় দিন প্রস্তুতিতে।
- গত কয়েক বছরের প্রশ্ন দেখুন।
- “শুভ্র” বা “MP3” টাইপের বইগুলো ভালোভাবে পড়ে ফেলুন।
লিখিতর পর আসবে ভাইভা। এখানে সাধারণত জিজ্ঞেস করা হয়:
- নিজের নাম, জেলা, স্কুল
- পুলিশের কাজ সম্পর্কে ধারণা
- বাংলাদেশের কিছু সাধারণ জ্ঞান
ভয় পাওয়ার কিছু নেই, আত্মবিশ্বাস থাকলেই সব পারা যায়।
চূড়ান্ত বাছাই ও ট্রেনিং: যেখানে গড়ে ওঠে একজন সাহসী পুলিশ
লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার পর যারা চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত হবেন, তাদের জন্য শুরু হবে নতুন অধ্যায়। পুলিশে আসা মানে শুধু চাকরি নয়, এটা জীবন বদলে দেওয়ার মতো একটা সিদ্ধান্ত। আপনি যদি এবার নির্বাচিত হন, তাহলে আপনাকে ৬ মাসের ট্রেনিং-এ অংশ নিতে হবে।
এই ট্রেনিং হয় মূলত পুলিশ ট্রেনিং সেন্টার (PTC) বা পুলিশ ট্রেনিং স্কুল (PTS)-এ। এখানে শেখানো হয়:
- অস্ত্র চালানো
- আইন-কানুন ও আচরণবিধি
- জনসচেতনতা ও কমিউনিটি পুলিশিং
- ফিজিক্যাল ফিটনেস
অনেকেই ভাবে ট্রেনিং মানেই শাস্তি—আসলে ব্যাপারটা উল্টো। এটা এমন একটা জায়গা, যেখানে একসঙ্গে অনেক তরুণ-তরুণী এক নতুন অধ্যায়ে পা দেয়। আমি একজন প্রাক্তন কনস্টেবলের সঙ্গে কথা বলেছিলাম—তিনি বললেন, “ট্রেনিং-এর দিনগুলো আমার জীবনের সবচেয়ে কঠিন কিন্তু সবচেয়ে গর্বের সময়।”
বেতন, সুযোগ-সুবিধা ও পদোন্নতির পথ
অনেকেই ভাবেন, কনস্টেবল মানেই ছোট পদ। কিন্তু বাস্তবে কনস্টেবল থেকেই শুরু হয় উজ্জ্বল ক্যারিয়ারের যাত্রা। আসুন দেখি, আপনি “পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগ ২০২৫ সার্কুলার” অনুযায়ী নির্বাচিত হলে কী ধরনের সুবিধা পাবেন:
- মূল বেতন স্কেল: ৯,০০০ – ২১,৮০০ টাকা (গ্রেড-১৭)
- বাড়িভাড়া, চিকিৎসা ও উৎসব ভাতা
- ইউনিফর্ম ও খাওয়া-দাওয়ার ভাতা
- চাকরির নিশ্চয়তা ও পেনশন সুবিধা
এখানেই শেষ না—পদোন্নতির সুযোগ রয়েছে। নিয়মিত প্রমোশনের মাধ্যমে একজন কনস্টেবল হতে পারেন:
- নায়েক
- এএসআই (সহকারী উপ-পরিদর্শক)
- এসআই (উপ-পরিদর্শক)
- এমনকি ওসি পর্যন্ত
একজন কনস্টেবল নিজ যোগ্যতা দিয়ে আজীবনের জন্য দেশের সম্মানিত কর্মকর্তা হয়ে উঠতে পারেন।
প্রস্তুতির টিপস: স্বপ্ন পূরণে বাস্তব পরিকল্পনা
আমরা অনেক সময় ভাবি, পড়াশোনা কঠিন, চাকরি পাওয়া অসম্ভব। কিন্তু যারা সময়ের সঠিক ব্যবহার করে, তাদের জন্য সব সম্ভব। তাই চলুন দেখি কিছু প্রস্তুতির রুটিন:
📅 সাপ্তাহিক রুটিন (উদাহরণ):
দিন | কাজ |
রবি | ২ কিমি দৌড়, বাংলা ব্যাকরণ অধ্যয়ন |
সোম | ম্যাথ অনুশীলন, ২০ মিনিট জেনারেল নলেজ |
মঙ্গল | ইংরেজি গ্রামার, পুশ-আপ প্র্যাকটিস |
বুধ | মক টেস্ট, প্রশ্ন সমাধান |
বৃহস্পতি | স্থানীয় খবর পড়া, শরীরচর্চা |
শুক্র | ভাইভা প্র্যাকটিস, পরিচ্ছন্নতা ও পোশাক চেক |
শনি | বিশ্রাম ও মোট রিভিশন |
এই রুটিন আপনি নিজের মতো করে সাজিয়ে নিতে পারেন। দরকার শুধু নিয়মিত অনুশীলন আর নিজের প্রতি বিশ্বাস।
মানসিক প্রস্তুতি: আত্মবিশ্বাস, সহনশীলতা ও মানবিকতা
শারীরিক প্রস্তুতির পাশাপাশি, মানসিকভাবে প্রস্তুত হওয়া সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ একজন পুলিশ সদস্য শুধু বাহুবলে নয়, হৃদয় দিয়ে কাজ করেন।
এই পেশায় থাকবে:
- দীর্ঘ সময় ডিউটি
- মানুষের সঙ্গে আচরণ করার দায়িত্ব
- আইন মেনে, মানবতা রক্ষা করে চলার চ্যালেঞ্জ
আমি চিনি এমন একজন নারী কনস্টেবল, যিনি ডিউটিতে থাকা অবস্থায় একজন প্রসূতিকে হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে জীবন বাঁচিয়েছেন। এমন মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি না থাকলে পুলিশ হওয়া সম্ভব নয়।
তাই যারা “পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগ ২০২৫ সার্কুলার” দেখে শুধু চাকরি পেতে চায়, তাদের বলব—চাকরি নয়, এটা দায়িত্বের জায়গা। আপনাকে হতে হবে দায়িত্ববান, ধৈর্যশীল আর সাহসী।
গ্রামবাংলা থেকে শহর পর্যন্ত—পুলিশ কনস্টেবল মানেই গর্বের নাম
বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি পরিবারেই এখন অন্তত একজন সদস্য সরকারি চাকরির স্বপ্ন দেখে। পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগ ২০২৫ সার্কুলার সেই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার সবচেয়ে সহজ এবং সম্ভাবনাময় পথগুলোর একটি।
গ্রামের একজন দরিদ্র কৃষকের ছেলে বা শহরের গলির এক সাহসী তরুণ—যেই হোন না কেন, এই নিয়োগের মধ্য দিয়ে আপনি নিজেকে প্রমাণ করতে পারবেন।
শেষ কথা: ইউনিফর্ম পরে গর্বিত হোন, আগে গড়ুন নিজেকে
শেষে একটা কথাই বলব—স্বপ্নের শুরু হয় সাহস থেকে, আর বাস্তবতা গড়ে উঠে প্রস্তুতি দিয়ে। আপনি যদি সত্যিই পুলিশ হতে চান, তাহলে আজ থেকেই শুরু করুন।
শরীরচর্চা করুন, প্রতিদিন কিছু সময় পড়াশোনায় দিন, আর নিয়মিত “পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগ ২০২৫ সার্কুলার” সংক্রান্ত আপডেট দেখে চোখ রাখুন সঠিক জায়গায়।
এই নিয়োগের মাধ্যমে হয়তো আপনি হয়ে উঠবেন সেই ব্যক্তি, যাকে দেখে গ্রামের ছেলেমেয়েরা স্বপ্ন দেখতে শিখবে। হয়তো আপনার হাত ধরেই একজন অসহায় মানুষ আবার বাঁচার সাহস পাবে।
আপনার স্বপ্নকে বাস্তব রূপ দিন। সাহসিকতার চিহ্ন ধারণ করুন। ইউনিফর্মের মর্যাদা বজায় রাখুন। আপনার পথচলার শুরু হোক এই নিয়োগ সার্কুলার থেকেই।
সকল চাকরির আপডেট তথ্য পেতে আমাদের সাথে থাকুন।

Welcome to BD Govt Job Circulars – Your Trusted Source for All Government Job Updates in Bangladesh!