বাংলাদেশে শিক্ষকতা শুধু একটি পেশা নয়—এটি একটি সম্মানজনক দায়িত্ব। এই দায়িত্ব পালনের জন্য প্রয়োজন হয় নিবন্ধন, এবং ১৯তম শিক্ষক নিবন্ধন সার্কুলার ২০২৫ ঠিক সেই সুযোগের দরজা খুলে দিয়েছে নতুন প্রজন্মের শিক্ষক হতে চাওয়া হাজার হাজার শিক্ষার্থীর জন্য।
যদি আপনি নিজেকে কখনও একজন আদর্শ শিক্ষক হিসেবে কল্পনা করে থাকেন—কালো বোর্ডের সামনে দাঁড়িয়ে, শিক্ষার্থীদের স্বপ্ন দেখাতে দেখাতে—তাহলে এই সার্কুলারটি আপনার জীবনের একটি বড় মোড় হতে পারে।
এই লেখায় আমরা আলোচনা করব ১৯তম শিক্ষক নিবন্ধন সার্কুলার ২০২৫ এর বিস্তারিত দিকগুলো—আবেদন প্রক্রিয়া, যোগ্যতা, প্রস্তুতি, সিলেবাস এবং বাস্তব জীবনের প্রস্তুতির পরামর্শ। সব কিছু এমনভাবে বলব যেন আপনি বন্ধুর কাছ থেকে পরামর্শ নিচ্ছেন।
নিবন্ধন সার্কুলার কী এবং কেন এটা গুরুত্বপূর্ণ
শিক্ষক নিবন্ধন সার্কুলার মূলত একধরনের সরকারি বিজ্ঞপ্তি, যেখানে শিক্ষকদের জন্য পরীক্ষা আয়োজনের মাধ্যমে নিবন্ধন প্রদান করা হয়। এই নিবন্ধন প্রক্রিয়া পরিচালনা করে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (NTRCA)।
যারা বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা করতে চান, তাদের জন্য এই নিবন্ধন বাধ্যতামূলক। ১৯তম শিক্ষক নিবন্ধন সার্কুলার ২০২৫ সেই প্রক্রিয়ারই সাম্প্রতিকতম ধাপ।
এই সার্কুলারের গুরুত্ব কেন?
-
এটি একটি জাতীয়ভাবে স্বীকৃত পরীক্ষার সুযোগ, যা পাস করলে আপনি এনটিআরসিএ তালিকাভুক্ত শিক্ষক হতে পারবেন।
-
এটি আপনাকে সরকারি ভাবে প্রাধান্যপ্রাপ্ত চাকরির সুযোগ এনে দেয়।
-
এটি দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় আপনার ভূমিকা নিশ্চিত করে।
নিবন্ধন ছাড়া বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিয়োগ প্রক্রিয়া অসম্পূর্ণ থেকে যায়। তাই ১৯তম শিক্ষক নিবন্ধন সার্কুলার ২০২৫-এর মাধ্যমে পাস করা মানে হলো ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত থাকা।
১৯তম শিক্ষক নিবন্ধন সার্কুলার ২০২৫: আবেদনের সময়সূচি ও বিস্তারিত তথ্য
এইবারের সার্কুলার কিছু নতুন নিয়ম এবং প্রযুক্তিগত সুবিধা নিয়ে এসেছে, যা আগের বছরগুলোর চেয়ে কিছুটা আলাদা।
সারসংক্ষেপ টেবিল:
বিষয় | বিবরণ |
---|---|
সার্কুলার নম্বর | ১৯তম শিক্ষক নিবন্ধন সার্কুলার ২০২৫ |
আবেদন শুরু | মে ২০২৫, নির্দিষ্ট তারিখ পরবর্তীতে ঘোষণা হবে |
আবেদন শেষ | আনুমানিক ৩০ দিনের মধ্যে শেষ হবে |
আবেদন ফি | সাধারণত ৩৫০ টাকা (সংশোধন হতে পারে) |
আবেদনের পদ্ধতি | অনলাইনে (ntrca.teletalk.com.bd) |
প্রাথমিক পরীক্ষা | ২০২৫ সালের শেষ দিকে সম্ভাব্য |
লিখিত পরীক্ষা | প্রাথমিক পাসকারীদের জন্য পরবর্তী ধাপে |
মৌখিক পরীক্ষা | লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের জন্য |

মূল keyword “১৯তম শিক্ষক নিবন্ধন সার্কুলার ২০২৫” এখানে বারবার উঠে আসছে কারণ এটি পুরো প্রসেসের মূল কেন্দ্রবিন্দু।
আবেদনের ধাপ:
-
প্রথমে Teletalk-এর ওয়েবসাইটে গিয়ে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে।
-
নাম, জন্ম তারিখ, এনআইডি, শিক্ষাগত যোগ্যতা, পছন্দের পদবী ইত্যাদি তথ্য সঠিকভাবে দিতে হবে।
-
ছবি ও স্বাক্ষর নির্ধারিত ফরম্যাটে আপলোড করতে হবে।
-
এরপর নির্দিষ্ট ফি জমা দিয়ে আবেদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে।
এই ধাপে আপনি যদি একবার ভুল করেন, পরবর্তীতে তা সংশোধন করা কঠিন হতে পারে। তাই ধৈর্য ধরে প্রতিটি তথ্য যাচাই করে পূরণ করা জরুরি।
কে আবেদন করতে পারবেন: যোগ্যতার খুঁটিনাটি বিশ্লেষণ
প্রত্যেক পরীক্ষার একটি নির্দিষ্ট যোগ্যতা থাকে। ১৯তম শিক্ষক নিবন্ধন সার্কুলার ২০২৫-এ কিছু গুরুত্বপূর্ণ যোগ্যতা মানদণ্ড নির্ধারণ করা হয়েছে।
প্রয়োজনীয় যোগ্যতা:
-
স্নাতক (সম্মান) অথবা মাস্টার্স ডিগ্রী যেকোনো স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।
-
শিক্ষাগত যোগ্যতা সংশ্লিষ্ট বিষয়ের উপর ভিত্তি করে মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক বা কলেজ পর্যায়ে আবেদন করতে হবে।
-
B.Ed অথবা M.Ed ডিগ্রী থাকলে তা অগ্রাধিকার পাবে, যদিও সবক্ষেত্রে বাধ্যতামূলক নয়।
-
বয়স সাধারণত ৩৫ বছরের মধ্যে থাকতে হয়।
যদি আপনি মনে করেন, “আমার GPA তো কম, আমি পারব না”, তাহলে বলি—এই পরীক্ষায় শুধু CGPA নয়, আপনার ধৈর্য, প্রস্তুতি, এবং মনোযোগই আপনাকে এগিয়ে রাখবে।
পরীক্ষার ধরণ ও প্রস্তুতির কৌশল: পাস করতে হলে কী করতে হবে?
নিবন্ধন পরীক্ষাটি তিনটি ধাপে অনুষ্ঠিত হয়—প্রাথমিক, লিখিত ও মৌখিক। প্রতিটি ধাপেই আলাদা প্রস্তুতি দরকার।
ধাপে ধাপে বিশ্লেষণ:
-
প্রাথমিক পরীক্ষা:
-
MCQ ভিত্তিক (১০০ নম্বর)
-
বিষয়ভিত্তিক না, বরং সাধারণ জ্ঞান, বাংলা, ইংরেজি, গণিত ও ICT থেকে প্রশ্ন আসে
-
সময়: ১ ঘণ্টা
-
Negative marking থাকে (০.৫০ করে)
-
-
লিখিত পরীক্ষা:
-
বিষয়ভিত্তিক প্রশ্নপত্র (২০০ নম্বর)
-
বিস্তৃত উত্তর দিতে হয়, যেমন রচনা, বিশ্লেষণ, ব্যাখ্যা ইত্যাদি
-
-
মৌখিক পরীক্ষা:
-
শিক্ষকতা-সংক্রান্ত জ্ঞান ও নিজের বিষয়ভিত্তিক বোঝাপড়া যাচাই করা হয়
-
আপনার আত্মবিশ্বাস ও ব্যক্তিত্ব মূল্যায়িত হয়
-
প্রস্তুতির সেরা কৌশল:
-
প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময় ধরে বিষয়ভিত্তিক স্টাডি করুন
-
বিগত বছরের প্রশ্ন অনুশীলন করুন
-
Mock Test দিন নিয়মিত
-
বাংলা ব্যাকরণ ও ইংরেজির মূল Grammar নিয়মগুলো রিভিশন দিন
-
সাধারণ জ্ঞান ও ICT-র জন্য গণমাধ্যম ফলো করুন
আপনার যদি মনে হয়, “আমি কখনো এই ধরনের পরীক্ষায় অংশ নেইনি”, তাহলে শুরু হোক আজ থেকেই, ছোট ছোট পদক্ষেপ নিন।
সিলেবাস বিশ্লেষণ: কোন বিষয়ে কতটা প্রস্তুতি দরকার?
প্রশ্ন অনেকেই করেন—”সিলেবাসটা কেমন হবে? কী কী পড়তে হবে?” এটা জানলে প্রস্তুতি নেওয়া অনেক সহজ হয়ে যায়।
১৯তম শিক্ষক নিবন্ধন সার্কুলার ২০২৫-এর সিলেবাস মূলত তিনটি পর্যায়ে বিভক্ত। প্রত্যেকটি ধাপের জন্য আলাদা আলাদা বিষয় থাকে। তবে প্রাথমিক ধাপটি সবার জন্য একই রকম।
প্রাথমিক পরীক্ষার সিলেবাস (MCQ ভিত্তিক):
-
বাংলা ভাষা ও সাহিত্য – ২৫ নম্বর
-
ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য – ২৫ নম্বর
-
গণিত – ২৫ নম্বর
-
সাধারণ জ্ঞান ও ICT – ২৫ নম্বর
এখানে প্রতিটি বিষয়েই সাধারণ লেভেলের প্রশ্ন আসে। তবে প্রশ্নের ধরন হতে পারে বুদ্ধিমত্তা যাচাইমূলক।
লিখিত পরীক্ষার সিলেবাস:
লিখিত পরীক্ষা হয় সম্পূর্ণ বিষয়ভিত্তিক। আপনি যেই বিষয়ে শিক্ষক হতে চান, সেই বিষয়ের ওপরই প্রশ্ন আসবে। উদাহরণস্বরূপ:
-
বাংলা শিক্ষক হতে চাইলে বাংলা সাহিত্যের ধারাবাহিকতা, প্রাচীন-আধুনিক সাহিত্য বিশ্লেষণ, ব্যাকরণ, রচনা লেখার ক্ষমতা ইত্যাদি।
-
গণিত শিক্ষকের ক্ষেত্রে অ্যালজেব্রা, জ্যামিতি, ত্রিকোণমিতি থেকে শুরু করে উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের সমস্যাসমূহ।
লিখিত পরীক্ষায় নম্বর বণ্টন:
অংশ | বিষয় | নম্বর |
---|---|---|
ক | ব্যাখ্যা, সংক্ষিপ্ত উত্তর | ৫০ |
খ | রচনা, বিশ্লেষণাত্মক প্রশ্ন | ৭০ |
গ | বাস্তবমুখী প্রশ্ন / Case Study | ৮০ |
মৌখিক পরীক্ষার বিষয়বস্তু:
-
নিজ বিষয়ে গভীর ধারণা
-
শিক্ষকতার প্রতি আপনার দৃষ্টিভঙ্গি
-
শুদ্ধ উচ্চারণ, আত্মবিশ্বাস, এবং উপস্থিতি
এটি অনেকটাই ইন্টারভিউর মতো, যেখানে বোর্ড আপনার কথাবার্তা, চিন্তাশক্তি, এবং শিক্ষা ব্যবস্থার প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি পরখ করে।
নিজের অভিজ্ঞতা: যখন প্রথমবার নিবন্ধনের প্রস্তুতি নিই
যখন আমি প্রথমবার শিক্ষক নিবন্ধনের প্রস্তুতি নিতে শুরু করি, তখন সত্যি বলতে একটু ভয় কাজ করেছিল। মনে হতো—”এত জন পরীক্ষার্থী! আমি কি পারব?”
কিন্তু পরে বুঝেছি, এই পরীক্ষাটি শুধু মেধার পরীক্ষা নয়, ধৈর্যেরও পরীক্ষা। আমি প্রতিদিন ৩-৪ ঘণ্টা সময় দিতাম। শুরুর দিকে বাংলা ও ইংরেজিতে বেশি কষ্ট হতো। কিন্তু ধীরে ধীরে ধৈর্য ধরে অনুশীলন করে নিজেকে তৈরি করতে পেরেছিলাম।
একটা ছোট টিপস দিতে চাই—একটি ডায়েরি রাখুন, যেখানে প্রতিদিন কী পড়লেন, কী পারলেন না, তা লিখে রাখবেন। এতে আপনি নিজের অগ্রগতি স্পষ্ট দেখতে পাবেন।
সফলতার জন্য কিছু প্র্যাকটিকাল পরামর্শ
যেকোনো প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় শুধু বই পড়লেই হবে না—সঠিক পরিকল্পনা ও মানসিক প্রস্তুতিও দরকার। নিচে কিছু কার্যকর পরামর্শ দেওয়া হলো:
Bullet Points:
-
প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময় ধরে রুটিন অনুযায়ী পড়ুন
-
বিগত বছরের প্রশ্নপত্রে অভ্যস্ত হোন
-
মোবাইলের পরিবর্তে বই হাতে নিন (ডিজিটাল ডিটক্স)
-
সপ্তাহে একদিন রিভিশন দিন—”রিভিশন ইজ দ্য কী”
-
মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখুন—ধ্যান, হাঁটা, হালকা গান শুনতে পারেন
-
একসাথে পড়ার গ্রুপ বানান—বন্ধুদের সাথে বিষয় আলোচনা করুন
-
ঘন ঘন মক টেস্ট দিন—টাইম ম্যানেজমেন্ট শিখতে পারবেন
এই ছোট ছোট অভ্যাসগুলো ধীরে ধীরে আপনাকে অন্যদের থেকে এগিয়ে রাখবে।
মানসিক প্রস্তুতি: হেরে যাওয়ার আগে কখনো হার মানবেন না
১৯তম শিক্ষক নিবন্ধন সার্কুলার ২০২৫ কেবল একটি সার্কুলার নয়, এটি অনেকের জন্য জীবনের লক্ষ্য। তাই হতাশা আসতেই পারে। কিন্তু আপনি যদি মনে রাখেন, “আমি যদি চেষ্টা না করি, তাহলে কখনোই জানব না আমি পারতাম কি না”, তাহলে আপনি আর পিছিয়ে থাকবেন না।
প্রতিটি ব্যর্থতা একটা শিখন। আমার এক বন্ধু তৃতীয় বারের চেষ্টায় পাস করেছে। সে বলেছিল, “প্রথমবার ভয় পেয়েছিলাম, দ্বিতীয়বার তাড়াহুড়ো করেছিলাম, তৃতীয়বার বুঝে করলাম—আর তখনই পাস করলাম।”
নিজের ওপর বিশ্বাস রাখুন। প্রতিদিনের ছোট অগ্রগতি মিলেই একদিন বড় সাফল্যে পৌঁছে দিবে।
শেষ কথা: আপনার শিক্ষক হবার স্বপ্ন এখন হাতের মুঠোয়
এই মুহূর্তে যদি আপনি দ্বিধায় থাকেন—“আবেদন করব কি না?”, তাহলে বলি—১৯তম শিক্ষক নিবন্ধন সার্কুলার ২০২৫ আপনার জন্য একটি সুযোগ, যা ভবিষ্যতে হয়তো আর এক বছর পর আসবে। কিন্তু আপনি আজ প্রস্তুতি শুরু করলে আগামী বছর আপনি নিজেকে আরেকজন রেজিস্টার্ড শিক্ষক হিসেবে দেখতে পারবেন।
একটি নতুন দিগন্ত অপেক্ষা করছে—আপনার জন্য, আপনার ভবিষ্যতের শিক্ষার্থীদের জন্য। এখন শুধু দরকার সাহস করে একধাপ এগিয়ে যাওয়া।

Welcome to BD Govt Job Circulars – Your Trusted Source for All Government Job Updates in Bangladesh!