বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাস শুধুমাত্র একটি দেশের জন্মকাহিনি নয়, এটি বাঙালি জাতির আত্মত্যাগ, সংগ্রাম এবং অসাম্প্রদায়িক চেতনার প্রতীক। তাই “স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস” বিষয়টি ২০১৩ সাল থেকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক ও স্নাতক সম্মান কোর্সে অবশ্য পাঠ্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। বিষয়টির পূর্ণমান ১০০ এবং ক্রেডিট সংখ্যা ৪। শিক্ষার্থীদের জন্য এই সিদ্ধান্ত অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ, কারণ জাতীয় ইতিহাস না জানলে তারা ডিগ্রি অর্জন করলেও দেশ ও জাতির মূল শেকড় সম্পর্কে অজ্ঞ থেকে যাবে।
কেন অবশ্য পাঠ্য করা হলো
অনেক দিন ধরে ইতিহাসবিদ, শিক্ষক এবং সচেতন মহল দাবি জানাচ্ছিলেন যে জাতীয় ইতিহাসকে অবশ্য পাঠ্য করা হোক। কারণ নতুন প্রজন্মের অনেকেই মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, শহীদদের আত্মত্যাগ এবং স্বাধীনতার আদর্শ সম্পর্কে যথেষ্ট জানে না। এই না জানার কারণে সমাজে মৌলবাদী চিন্তার উত্থান হয়েছে, অসাম্প্রদায়িকতা শুধু একটি শব্দে পরিণত হয়েছে। তাই জাতীয় ইতিহাসকে পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যেন শিক্ষার্থীরা স্বাধীনতার প্রকৃত তাৎপর্য অনুধাবন করতে পারে।
মুক্তিযুদ্ধ ও আত্মত্যাগের গুরুত্ব
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে প্রায় ত্রিশ লক্ষ শহীদ তাদের প্রাণ উৎসর্গ করেছিলেন। পাশাপাশি ছয় লক্ষেরও বেশি নারী আত্মত্যাগ করেছিলেন। এই ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত হয় একটি স্বাধীন, অসাম্প্রদায়িক ও ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র। যদি এই ইতিহাস শিক্ষার্থীরা না জানে, তবে তারা শেকড়হীন প্রজন্মে পরিণত হবে। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস শুধু রাজনৈতিক স্বাধীনতার নয়, এটি একটি জাতির আত্মপরিচয় গঠনের প্রক্রিয়া।
সিলেবাস প্রণয়ন ও অধ্যায় বিভাজন
২০১৩ সালে সংসদীয় স্থায়ী কমিটি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়কে নির্দেশ দেয় ইতিহাসকে অবশ্য পাঠ্য করার জন্য। পরবর্তীতে একটি কমিটি গঠন করা হয়, যেখানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলা কলেজ এবং ইডেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকরা যুক্ত ছিলেন।
কমিটি দীর্ঘ আলোচনার পর সিদ্ধান্ত নেয় যে সিলেবাসকে তিনটি প্রধান পর্যায়ে ভাগ করা হবে:
- প্রথম পর্ব – ভারত ভাগের আগে সর্বভারতীয় ও অভিন্ন বাংলার প্রেক্ষাপট।
- দ্বিতীয় পর্ব – ১৯৪৭ থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধের পটভূমি।
- তৃতীয় পর্ব – মুক্তিযুদ্ধ এবং বঙ্গবন্ধুর শাসনকাল, যা শেষ হয় ১৯৭৫ সালে।
এছাড়া সিলেবাসে মোট ১৪টি অধ্যায় রাখার প্রস্তাব করা হয়েছিল, যদিও পরবর্তীতে কিছু অধ্যায় বাদ দিয়ে অনুমোদিত সংস্করণ কার্যকর হয়।
১৯৭১ থেকে ১৯৭৫: এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সেই স্বাধীনতার আদর্শ নিয়ে দেশ পরিচালনা শুরু করেন। কিন্তু ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু সপরিবারে নিহত হওয়ার পর মুক্তিযুদ্ধের অনেক অর্জন নস্যাৎ করা হয়। দেশে আবারও দ্বিজাতিতত্ত্ব চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হয়।
তবে ইতিহাসের মূল ধারা অনুযায়ী ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় ছিল দ্বিজাতিতত্ত্বের চূড়ান্ত পরাজয়। ১৯৭১–৭৫ সালের সময়কালকে তাই ইতিহাসের মেরুদণ্ড বলা হয়।
চ্যালেঞ্জ ও সীমাবদ্ধতা
এই পাঠ্যক্রম বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে কিছু সমস্যা রয়েছে—
- অনেক কলেজে পর্যাপ্ত লাইব্রেরি নেই।
- রেফারেন্স বইয়ের অভাব রয়েছে।
- ইতিহাস পড়ানোর জন্য দক্ষ শিক্ষকের ঘাটতি আছে।
তবুও শিক্ষার্থীদের সুবিধার্থে একটি রেফারেন্স বই প্রকাশ করা হয়েছে, যাতে মূল বিষয়গুলো সহজভাবে ব্যাখ্যা করা আছে। ভবিষ্যতে আরও সংস্করণ প্রকাশের পরিকল্পনা রয়েছে।
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস PDF Download
যেসব শিক্ষার্থী অনলাইনে পড়াশোনা করতে চায়, তাদের জন্য “স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস PDF” সংস্করণ পাওয়া যায়। এতে অনুমোদিত সিলেবাস অনুযায়ী অধ্যায়গুলো সাজানো আছে। PDF ডাউনলোড করে শিক্ষার্থীরা যেকোনো সময় পড়তে পারে এবং পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে পারে।
উপসংহার
স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস জানা প্রতিটি নাগরিকের জন্য অপরিহার্য। কারণ একটি জাতি তার ইতিহাস ভুলে গেলে ভবিষ্যতেও পথ হারায়। শিক্ষার্থীরা যদি মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু এবং জাতীয় ইতিহাস সম্পর্কে সঠিকভাবে জানতে পারে, তবে তারা একটি সচেতন, দেশপ্রেমিক ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গঠনে ভূমিকা রাখতে পারবে। তাই PDF আকারে সংরক্ষণ, অধ্যায়ভিত্তিক পাঠ ও গবেষণা এই প্রজন্মকে জাতীয় ইতিহাসে শেকড়গাঁথা করে তুলবে।

Welcome to BD Govt Job Circulars – Your Trusted Source for All Government Job Updates in Bangladesh!