ভূগোল ও পরিবেশ ১০ম অধ্যায় সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর (SSC 2026)

ভূগোল ও পরিবেশ ১০ম অধ্যায় সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর (SSC 2026)

In This Content

ভূগোল ও পরিবেশ ১০ম অধ্যায় সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর

১. বাংলাদেশের আয়তন ব্যাখ্যা কর।

উত্তর: বাংলাদেশের আয়তন মোট ১,৪৭,৫৭০ বর্গকিলোমিটার। এই ছোট্ট ভূখণ্ডে প্রায় ১৭ কোটির বেশি মানুষ বসবাস করে। দেশের ভেতরে নদী অঞ্চলের আয়তন প্রায় ৯,৪০৫ বর্গকিলোমিটার এবং বনাঞ্চলের আয়তন প্রায় ২১,৬৫৭ বর্গকিলোমিটার। দক্ষিণে উপকূলীয় এলাকায় জেগে ওঠা চরভূমি ক্রমশ বাংলাদেশের আয়তন বাড়াচ্ছে। সমুদ্রসীমার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের ১২ নটিক্যাল মাইল টেরিটোরিয়াল সীমানা এবং ২০০ নটিক্যাল মাইল অর্থনৈতিক একান্ত অঞ্চল রয়েছে। ফলে স্থলভাগ ছাড়াও সমুদ্র থেকে বিপুল সম্পদ আহরণের সুযোগ রয়েছে। এভাবে বাংলাদেশের আয়তন শুধু ভূমির দিক থেকে নয়, সমুদ্রাঞ্চল মিলিয়েও যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ।

২. স্রোতজ সমভূমি কী?

উত্তর: বাংলাদেশের বদ্বীপ অঞ্চলের দক্ষিণাংশে অবস্থিত যে অঞ্চল জোয়ার-ভাটার প্রভাবে নিয়মিত পরিবর্তিত হয়, তাকে স্রোতজ সমভূমি বলা হয়। এখানে অসংখ্য নদীছড়া প্রবাহিত হয়ে খাল-বিল সৃষ্টি করেছে। এই সমভূমির বেশিরভাগ এলাকা ঘন ম্যানগ্রোভ অরণ্যে আচ্ছাদিত, যা জীববৈচিত্র্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন এই অঞ্চলে অবস্থিত। নিয়মিত জোয়ার-ভাটা ভূমির উর্বরতা বাড়ায় এবং মৎস্য সম্পদের বিকাশে সহায়তা করে। একইসাথে ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগে এ অঞ্চল ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে। তাই স্রোতজ সমভূমি বাংলাদেশের ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্যে গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে।

৩. পদ্মা নদীর গতিপথ সংক্ষেপে লেখ।

উত্তর: পদ্মা বাংলাদেশের একটি প্রধান নদী এবং গঙ্গা নদীর মূল শাখা। হিমালয়ের গঙ্গোত্রী হিমবাহ থেকে উৎপন্ন গঙ্গা ভারতের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে রাজশাহীর দক্ষিণ-পশ্চিম প্রান্তে পদ্মা নামে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। কুষ্টিয়ার ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে এটি দৌলতদিয়ার কাছে যমুনা নদীর সাথে মিলিত হয়। এরপর মিলিত স্রোত দক্ষিণ-পূর্ব দিকে প্রবাহিত হয়ে চাঁদপুরের কাছে মেঘনার সাথে একত্রিত হয়। এই তিন নদীর মিলিত প্রবাহ মেঘনা নামে বিশাল জলধারা সৃষ্টি করে বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়। পদ্মার উর্বর পলিভূমি বাংলাদেশের কৃষি ও অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

৪. অশ্বখুরাকৃতি নদীখাত কী?

উত্তর: অশ্বখুরাকৃতি নদীখাত হলো নদীর বাঁক পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট একটি বিশেষ ভূ-প্রকৃতি। নদী যখন আঁকাবাঁকা পথে প্রবাহিত হয়, তখন বাঁকের ভিতরের অংশে পলি জমে আর বাইরের অংশ ক্ষয়ের ফলে ধীরে ধীরে নদীর দুই বাঁক কাছাকাছি চলে আসে। একসময় নদী পুরনো বাঁকা পথ পরিত্যাগ করে নতুন সোজা পথে প্রবাহিত হয়। তখন পুরনো খাতটি পানিবিহীন হয়ে ঘোড়ার খুরের মতো আকৃতি নেয়, যা অশ্বখুরাকৃতি নদীখাত নামে পরিচিত। বাংলাদেশে এমন অনেক ছোট-বড় বিল, জলাশয় ও নিম্নভূমি এই খাতের উদাহরণ হিসেবে দেখা যায়।

See also  পদার্থবিজ্ঞান ৯ম অধ্যায় সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর (SSC 2026)

৫. ব্রহ্মপুত্র নদীর গতিপথ লেখ।

উত্তর: ব্রহ্মপুত্র নদ হিমালয়ের কৈলাস শৃঙ্গের কাছে মানস সরোবর থেকে উৎপন্ন হয়ে প্রথমে তিব্বতের মধ্য দিয়ে পূর্ব দিকে প্রবাহিত হয়। পরে আসামের ভেতর দিয়ে পশ্চিম দিকে প্রবাহিত হয়ে কুড়িগ্রাম জেলার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। এরপর দেওয়ানগঞ্জের কাছে দক্ষিণ-পূর্ব দিকে বাঁক নিয়ে ময়মনসিংহ জেলার মধ্য দিয়ে ভৈরববাজারের দক্ষিণে মেঘনায় পতিত হয়। ধরলা ও তিস্তা এর প্রধান উপনদী এবং বংশী ও শীতলক্ষ্যা এর শাখানদী। ব্রহ্মপুত্র বাংলাদেশের জীববৈচিত্র্য, কৃষি, নৌপরিবহন ও অর্থনীতির জন্য একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ নদী।

৬. যমুনা নদীর গতিপথ লেখ।

উত্তর: যমুনা নদী ব্রহ্মপুত্রের একটি প্রধান শাখা। ময়মনসিংহ জেলার দেওয়ানগঞ্জের কাছে ব্রহ্মপুত্র দক্ষিণে নেমে এসে যমুনা নামে পরিচিত হয়। এরপর এটি টাঙ্গাইল ও সিরাজগঞ্জ জেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে দৌলতদিয়ার কাছে পদ্মা নদীর সাথে মিলিত হয়। যমুনার প্রধান উপনদী করতোয়া ও আত্রাই নদী। ধলেশ্বরী যমুনার শাখানদী, যা পরে বুড়িগঙ্গার সাথে যুক্ত হয়। যমুনা নদী বাংলাদেশের অন্যতম প্রশস্ত নদী এবং এটি কৃষি, মৎস্য, নৌপরিবহনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তবে বর্ষায় ভাঙন সৃষ্টি করে বিপুল ক্ষতিও সাধন করে।

৭. কর্ণফুলী নদীর গতিপথ লেখ।

উত্তর: কর্ণফুলী নদী আসামের লুসাই পাহাড় থেকে উৎপন্ন হয়ে প্রায় ২৭৪ কিলোমিটার দীর্ঘ পথ অতিক্রম করেছে। নদীটি প্রথমে পাহাড়ি এলাকায় দ্রুত বেগে প্রবাহিত হয়ে রাঙামাটি হয়ে চট্টগ্রাম অঞ্চলের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়। পরে এটি বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়। কর্ণফুলী নদীর উপর নির্মিত কাপ্তাই বাঁধ থেকে জলবিদ্যুৎ উৎপন্ন করা হয়, যা বাংলাদেশের বিদ্যুৎ চাহিদা মেটাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। কর্ণফুলীর প্রধান উপনদী হলো কাসালাং, হালদা এবং বোয়ালখালি। এটি শুধু বিদ্যুতের উৎস নয়, নৌপরিবহন, কৃষি, মৎস্যচাষ ও শিল্পকারখানার জন্য অপরিহার্য জলসম্পদ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।

৮. বাংলাদেশের প্লাবন সমভূমি উর্বর কেন ব্যাখ্যা কর।

উত্তর: বাংলাদেশের প্লাবন সমভূমি বিশ্বের অন্যতম উর্বর অঞ্চল। এর প্রধান কারণ হলো নদী। প্রায় ৭০০ নদী প্রতিবছর পাহাড় থেকে নেমে আসে এবং কোটি কোটি টন পলি বহন করে। বর্ষাকালে এই নদীগুলো দুই তীর ছাপিয়ে প্লাবনের সৃষ্টি করে। প্লাবনের পানির সাথে আসা পলি জমির উপরে স্তর তৈরি করে জমিকে উর্বর করে তোলে। পলির মধ্যে থাকে নাইট্রোজেন, ফসফরাস, পটাশিয়ামের মতো প্রয়োজনীয় উপাদান, যা ফসল উৎপাদনে সাহায্য করে। তাই বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রচুর ফসল জন্মে। তবে অতিরিক্ত বন্যা কখনো কখনো জমির ক্ষতিও করে।

৯. বাংলাদেশের অর্থনৈতিক কার্যকলাপের ওপর নদনদীর প্রভাব লেখ।

উত্তর: বাংলাদেশের অর্থনৈতিক জীবনে নদ-নদীর গুরুত্ব অপরিসীম। কৃষির জন্য সেচের পানি সরবরাহে নদী অন্যতম উৎস। বর্ষাকালে নদী থেকে আসা পলি জমিকে উর্বর করে তোলে। নদী থেকে প্রাপ্ত মাছ জনগণের খাদ্য ও পুষ্টির বড় অংশ জোগায়। শিল্পকারখানার জন্যও নদী থেকে পানি সংগ্রহ করা হয়। তাছাড়া নদী বিদ্যুৎ উৎপাদনেও সহায়তা করে, যেমন কর্ণফুলী নদীর কাপ্তাই বাঁধ। নৌপরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থায় নদীর অবদান অনন্য। তাই বলা যায়, বাংলাদেশের অর্থনীতি ও জীবিকা নির্বাহে নদী সরাসরি ভূমিকা পালন করে।

See also  Price Hike Paragraph with Bangla Meaning (বাংলা অর্থসহ)

১০. শীত ও গ্রীষ্মকালের মৌসুমি বায়ুপ্রবাহ সম্পর্কে লেখ।

উত্তর: মৌসুমি বায়ু হলো ঋতুভিত্তিক বায়ুপ্রবাহ, যার দিক ঋতু অনুযায়ী পরিবর্তিত হয়। গ্রীষ্মকালে উত্তর গোলার্ধ উত্তপ্ত হয়ে নিম্নচাপ সৃষ্টি করে। এসময় বঙ্গোপসাগর থেকে আর্দ্র বায়ু দক্ষিণ, দক্ষিণ-পশ্চিম ও দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে প্রবাহিত হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে এবং প্রচুর বৃষ্টি ঘটায়। অপরদিকে শীতকালে দক্ষিণ গোলার্ধ বেশি উত্তপ্ত হয়ে নিম্নচাপ তৈরি করে। ফলে উত্তর দিক থেকে শুষ্ক ও শীতল মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এই বায়ু শুষ্ক হওয়ায় শীতকালে দেশে তেমন বৃষ্টিপাত হয় না।

১১. মধুপুর গড়ের বর্ণনা দাও।

উত্তর: মধুপুর গড় বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চলে অবস্থিত একটি ভূ-প্রাকৃতিক উচ্চভূমি। এটি মূলত প্লাইস্টোসিন কালের সোপানভূমি, যা প্রায় ২৫,০০০ বছর আগে গঠিত হয়েছিল। মধুপুর গড় টাঙ্গাইল ও ময়মনসিংহ জেলার অংশ জুড়ে বিস্তৃত। ভাওয়াল গড়সহ এর মোট আয়তন প্রায় ৪,১০৩ বর্গকিলোমিটার। সমভূমি থেকে এর গড় উচ্চতা প্রায় ৩০ মিটার। এ অঞ্চলের মাটি লালচে রঙের ও দো-আঁশ প্রকৃতির। এখানে শালবনের আধিক্য রয়েছে। কৃষি, বিশেষ করে আনারস, কলা, লিচু ইত্যাদি চাষে মধুপুর গড়ের অবদান বিশাল।

১২. কালবৈশাখী ঝড় কীভাবে সংঘটিত হয়?

উত্তর: কালবৈশাখী ঝড় বাংলাদেশের গ্রীষ্মকালীন আবহাওয়ার একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য। মার্চ থেকে মে মাসের মধ্যে সূর্যের তীব্র তাপে ভূমি দ্রুত উত্তপ্ত হয় এবং নিম্নচাপ সৃষ্টি হয়। দিনের বেলা গরম বাতাস ওপরে উঠে যায়, ফলে সন্ধ্যার দিকে উত্তরের উচ্চচাপ থেকে শীতল ও আর্দ্র বায়ু দক্ষিণের নিম্নচাপে প্রবাহিত হয়। এর ফলে প্রবল বজ্রপাত, ঝড়ো হাওয়া ও বৃষ্টিসহ কালবৈশাখীর সৃষ্টি হয়। সাধারণত এটি স্বল্পস্থায়ী হলেও ভয়াবহ ক্ষতি করে থাকে। তবে কালবৈশাখী কৃষিক্ষেত্রে উপকারও আনে, কারণ এতে প্রচুর বৃষ্টি হয়।

১৩. বাংলাদেশের প্রধান নদ-নদীর গুরুত্ব ব্যাখ্যা কর।

উত্তর: বাংলাদেশের প্রধান নদ-নদী যেমন পদ্মা, যমুনা, মেঘনা, ব্রহ্মপুত্র ইত্যাদি দেশের জীবন ও অর্থনীতির সাথে নিবিড়ভাবে যুক্ত। কৃষিক্ষেত্রে সেচ ও পলি সরবরাহের মাধ্যমে এরা জমির উর্বরতা বাড়ায়। মৎস্য আহরণের প্রধান উৎসও হলো নদী। শিল্পকারখানায় পানি সরবরাহ, নৌপরিবহন এবং বিদ্যুৎ উৎপাদন নদীর উপর নির্ভরশীল। বর্ষাকালে বন্যা ঘটলেও এর মাধ্যমে নতুন পলি জমা হয়। নদী পর্যটন ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যেরও অংশ। তাই নদ-নদী শুধু ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য নয়, বরং বাংলাদেশের অর্থনীতি ও সংস্কৃতির প্রাণশক্তি।

১৪. তিস্তা নদীর গতিপথ বর্ণনা কর।

উত্তর: তিস্তা নদী হিমালয়ের পাহাড় থেকে উৎপন্ন হয়ে ভারতের সিকিম ও পশ্চিমবঙ্গ অতিক্রম করে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। এটি লালমনিরহাট ও নীলফামারী জেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে ব্রহ্মপুত্র নদে মিলিত হয়। তিস্তা নদী বর্ষাকালে ভীষণ উগ্র রূপ ধারণ করে এবং তীরবর্তী এলাকায় ভাঙন সৃষ্টি করে। আবার শুষ্ক মৌসুমে পানির প্রবাহ কমে যায়। কৃষির জন্য তিস্তার পানি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে ভারত ও বাংলাদেশের পানি বণ্টন সমস্যার কারণে শুষ্ক মৌসুমে কৃষিতে সমস্যা দেখা দেয়।

See also  স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস

১৫. বাংলাদেশের নদনদীর উপর ভিত্তি করে পরিবহন ব্যবস্থা বর্ণনা কর।

উত্তর: বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ হওয়ায় নদীপথ পরিবহনের অন্যতম মাধ্যম। দেশের প্রায় সব অঞ্চলে নদী জালের মতো বিস্তৃত হওয়ায় পণ্য পরিবহন ও যাত্রী চলাচলে নদীপথ গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে দক্ষিণাঞ্চল ও চরাঞ্চলে নৌপরিবহন ছাড়া অন্য কোনো সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থা নেই। নৌপথ তুলনামূলকভাবে সস্তা এবং ভারী পণ্য পরিবহনে উপযোগী। বর্ষাকালে নৌপথ আরও বিস্তৃত হয়। তবে শুষ্ক মৌসুমে নাব্যতা হ্রাস ও দুর্ঘটনার ঝুঁকি পরিবহন ব্যবস্থায় সমস্যা সৃষ্টি করে। তবুও নৌপরিবহন বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

১৬. বাংলাদেশের মৎস্য সম্পদে নদনদীর ভূমিকা কী?

উত্তর: বাংলাদেশের নদীগুলো মৎস্য সম্পদের প্রধান ভাণ্ডার। দেশে প্রায় ৭০০ নদী ও অসংখ্য খাল-বিল রয়েছে, যেখানে দেশীয় বিভিন্ন প্রজাতির মাছ পাওয়া যায়। পদ্মা, মেঘনা, যমুনা ও ব্রহ্মপুত্র নদ ইলিশসহ নানা প্রজাতির মাছের জন্য বিখ্যাত। নদীর মাছ শুধু মানুষের খাদ্য চাহিদা মেটায় না, বরং বিপুল অর্থনৈতিক কার্যকলাপের জন্ম দেয়। লক্ষ লক্ষ মানুষ মাছ ধরা, পরিবহন, বিক্রি ও প্রক্রিয়াজাতকরণের সাথে জড়িত। ফলে নদীর মাছ বাংলাদেশের খাদ্য নিরাপত্তা, পুষ্টি ও অর্থনীতিতে অপরিসীম গুরুত্ব বহন করে।

১৭. বর্ষাকালে বাংলাদেশের জীবনযাত্রায় নদীর প্রভাব কী?

উত্তর: বর্ষাকালে বাংলাদেশের প্রায় সব নদীই তীব্র স্রোতে পূর্ণ হয়ে ওঠে। নদী উপচে চারপাশের জমি প্লাবিত হয়, যা অনেক সময় বন্যার রূপ নেয়। বন্যায় মানুষের ঘরবাড়ি ও ফসল নষ্ট হয়, আবার অনেক এলাকা নদীভাঙনের শিকার হয়। তবে এর উপকারিতাও আছে। বন্যার পানির সাথে আসা পলি জমিকে উর্বর করে তোলে এবং কৃষি উৎপাদন বাড়ায়। নদী পূর্ণ থাকায় নৌপরিবহন সহজ হয়। মাছের প্রজননও এই সময়ে বেড়ে যায়। তাই বর্ষাকালে নদী যেমন সমস্যা সৃষ্টি করে, তেমনি কৃষি ও জীবিকার জন্য সুযোগও এনে দেয়।

১৮. বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকার ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য ব্যাখ্যা কর।

উত্তর: বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা দেশের দক্ষিণাংশে অবস্থিত। এই অঞ্চল স্রোতজ সমভূমি হিসেবে পরিচিত, যেখানে জোয়ার-ভাটার প্রভাব স্পষ্ট। সুন্দরবন বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন এখানেই অবস্থিত। এ অঞ্চলে নতুন চরভূমি গড়ে ওঠে, যা কৃষি ও বসতির সুযোগ সৃষ্টি করে। তবে উপকূলীয় অঞ্চল প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেমন ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস ও লবণাক্ততার সমস্যায় আক্রান্ত। এখানে নদী, খাল-বিল ও বনজ সম্পদ প্রচুর পরিমাণে রয়েছে। মৎস্য চাষ, লবণ উৎপাদন ও চিংড়ি চাষ অর্থনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। উপকূলীয় অঞ্চল তাই সুযোগ ও চ্যালেঞ্জের মিশ্রণ।

১৯. বাংলাদেশের নদনদী বন্যা সৃষ্টিতে কীভাবে ভূমিকা রাখে?

উত্তর: বাংলাদেশের নদনদীগুলো বর্ষাকালে উজান থেকে প্রচুর পানি বহন করে আনে। হিমালয়ের বরফ গলন ও মৌসুমি বৃষ্টির কারণে নদীর পানি দ্রুত বৃদ্ধি পায়। তখন নদী তার স্বাভাবিক প্রবাহে ধারণ করতে না পেরে তীর ছাপিয়ে আশেপাশের গ্রামাঞ্চল প্লাবিত করে। এভাবে নদী বন্যা সৃষ্টি করে। একদিকে বন্যা মানুষের ঘরবাড়ি, ফসল ও অবকাঠামোর ক্ষতি করে, অন্যদিকে জমিতে উর্বর পলি এনে দেয়। তাই নদনদী বন্যা সৃষ্টিতে যেমন ক্ষতির কারণ, তেমনি কৃষির জন্য এটি আশীর্বাদও হয়ে দাঁড়ায়।

২০. বাংলাদেশের নদ-নদী কিভাবে কৃষিকে প্রভাবিত করে?

উত্তর: বাংলাদেশের কৃষি নদ-নদীর উপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল। নদীগুলো থেকে সেচের পানি নিয়ে ধান, গম, আখ, সবজি ইত্যাদি ফসল চাষ করা হয়। বর্ষাকালে বন্যার পানি জমিতে পলি এনে জমিকে উর্বর করে তোলে। নদীভাঙনের ফলে কিছু ক্ষতি হলেও নতুন চরভূমি গড়ে উঠে, যা কৃষির জন্য ব্যবহৃত হয়। নদীর পানি মাছ চাষের জন্যও সহায়ক। তবে শুষ্ক মৌসুমে পানি সংকট কৃষিতে সমস্যা সৃষ্টি করে। সবমিলিয়ে নদ-নদী বাংলাদেশের কৃষিকে সমৃদ্ধ করেছে এবং খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top