ইতিহাস, ৬ষ্ঠ অধ্যায় থেকে ২০টি সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর

ইতিহাস, ৬ষ্ঠ অধ্যায় থেকে ২০টি সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর

In This Content

১. নবাবি শাসন বলতে কী বোঝ?

উত্তর: নবাবি শাসন বলতে বাংলার মুঘল আমলের দ্বিতীয় ধাপকে বোঝায়। সম্রাট আওরঙ্গজেবের মৃত্যুর পর মুঘল সাম্রাজ্য দুর্বল হয়ে পড়লে বাংলার সুবাদারগণ ধীরে ধীরে স্বাধীনতার পথে অগ্রসর হন। মুর্শিদ কুলী খান এই নবাবি শাসনের প্রথম ভিত্তি স্থাপন করেন। পরবর্তীতে আলীবর্দী খান, সিরাজউদ্দৌলাসহ আরও অনেকে নবাব হিসেবে শাসন করেন। এ সময় বাংলার রাজস্ব ব্যবস্থা উন্নত হয় এবং মুঘল দরবারে আর্থিক অবদান কমতে থাকে। যদিও নামেমাত্র তারা দিল্লির অধীন ছিলেন, বাস্তবে স্বাধীনভাবে শাসন করতেন। তাই আঠারো শতকে বাংলার ইতিহাসকে নবাবি শাসন যুগ বলা হয়।

২. জিয়াউদ্দিন বারানী কেন বাংলার নাম বুলগাকপুর রেখেছিলেন?

উত্তর: জিয়াউদ্দিন বারানী ছিলেন দিল্লির এক ঐতিহাসিক। তিনি বাংলার রাজনৈতিক অবস্থা বিশ্লেষণ করে বাংলাকে “বুলগাকপুর” বা বিদ্রোহের নগরী নামে অভিহিত করেছিলেন। মুসলিম শাসনের প্রথম দিকে বাংলার গভর্নরগণ দিল্লির সুলতানের অধীন থাকলেও অনেকেই বিদ্রোহ ঘোষণা করে স্বাধীন হতে চেয়েছিলেন। তাদের এই বিদ্রোহ দিল্লির শাসকদের জন্য অশান্তি ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করত। একদিকে দিল্লি বারবার সামরিক অভিযান চালাতো, অন্যদিকে বাংলার সুলতানরা স্বাধীনতার জন্য লড়াই চালাতো। এই ধারাবাহিক বিদ্রোহ ও অস্থির রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে বারানী বাংলাকে বুলগাকপুর বলে আখ্যা দিয়েছিলেন।

৩. মামলুক কাদের বলা হয়?

উত্তর: মুসলিম শাসনের প্রাথমিক পর্যায়ে ইওজ খলজির মৃত্যুর পর থেকে প্রায় ষাট বছর বাংলা দিল্লির অধীনস্থ প্রদেশ হিসেবে শাসিত হয়। এ সময়ে মোট পনেরজন শাসনকর্তা বাংলায় শাসন করেছিলেন। আশ্চর্যের বিষয়, তাদের মধ্যে দশজনই ছিলেন দাস। আরবিতে দাস শব্দের প্রতিশব্দ হলো “মামলুক”। তাই এদেরকে মামলুক বলা হয়। তারা মূলত দিল্লির সুলতানের পক্ষ থেকে প্রেরিত গভর্নর হলেও বাংলায় নিজেদের শক্ত অবস্থান গড়ে তোলেন। মামলুক যুগে বাংলা রাজনৈতিকভাবে স্থিতিশীল না হলেও পরবর্তী স্বাধীন সুলতানি শাসনের ভিত্তি তৈরি হয়।

৪. স্বাধীন সুলতানি যুগের সূচনা কীভাবে হয়েছিল?

উত্তর: স্বাধীন সুলতানি যুগের সূচনা ঘটে ১৩৩৮ খ্রিষ্টাব্দে। এ সময় সোনারগাঁওয়ের শাসনকর্তা বাহরাম খানের মৃত্যু হলে তার সশস্ত্র প্রহরী ফখরা ক্ষমতা গ্রহণ করেন। তিনি স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে নিজের নাম পরিবর্তন করে ফখরুদ্দিন মুবারক শাহ রাখেন এবং সোনারগাঁওয়ের সুলতান হিসেবে শাসন শুরু করেন। এরপর দ্রুতই তিনি নিজের ক্ষমতা বিস্তার করে বাংলার বিভিন্ন অঞ্চল নিয়ন্ত্রণে নেন। এই ঘটনাকেই বাংলার স্বাধীন সুলতানি যুগের সূচনা হিসেবে ধরা হয়। পরবর্তীতে ইলিয়াস শাহী বংশ সুলতানি শাসনকে দীর্ঘমেয়াদী ও সুসংহত করে।

See also  Price Hike Paragraph with Bangla Meaning (বাংলা অর্থসহ)

৫. বাংলায় স্বাধীন সুলতানি শাসনের ইতিহাস সংক্ষেপে লেখ।

উত্তর: বাংলার স্বাধীন সুলতানি শাসনকাল শুরু হয় ১৩৩৮ খ্রিষ্টাব্দে ফখরুদ্দিন মুবারক শাহের মাধ্যমে এবং শেষ হয় ১৫৩৮ খ্রিষ্টাব্দে। প্রায় ২০০ বছর ধরে এই শাসনকাল স্থায়ী ছিল। এ সময়ে বাংলার শাসকগণ দিল্লির সুলতানের অধীনে না থেকে স্বাধীনভাবে শাসন চালান। ইলিয়াস শাহী, গনিয়াই শাহী, হুসেন শাহী প্রভৃতি বংশ বাংলায় শাসন করেছে। এই সময়ে বাংলায় স্থাপত্য, সাহিত্য, শিল্প ও সংস্কৃতির ব্যাপক বিকাশ ঘটে। গৌড় নগরী তখন সমৃদ্ধ রাজধানী হিসেবে গড়ে ওঠে। সুলতানি শাসনের অবসান ঘটায় শেরশাহ শূর।

৬. স্থাপত্যশিল্পে হুসেন শাহের অবদান বর্ণনা কর।

উত্তর: হুসেন শাহ ছিলেন বাংলার হুসেন শাহী বংশের সর্বশ্রেষ্ঠ সুলতান। তিনি স্থাপত্যশিল্পে উদার পৃষ্ঠপোষকতা করেছিলেন। তার সময় অসংখ্য মসজিদ, খানকাহ ও মাদ্রাসা নির্মিত হয়। গৌড়ের ছোট সোনা মসজিদ তার শাসনামলের উল্লেখযোগ্য নিদর্শন। ইসলামি সংস্কৃতির বিকাশের জন্য তিনি অনেক মাদ্রাসা নির্মাণ করেন। এছাড়া গৌড়ে একটি দুর্গ ও তোরণ, মালদহে একটি বিদ্যালয় ও সেতু নির্মিত হয়েছিল তার উদ্যোগে। এসব স্থাপত্যকীর্তি তার শিল্পরুচি, ধর্মীয় অনুরাগ ও সাংস্কৃতিক পৃষ্ঠপোষকতার বহিঃপ্রকাশ। তাই বাংলার ইতিহাসে হুসেন শাহ স্থাপত্যপ্রেমী সুলতান হিসেবে পরিচিত।

৭. বাংলায় শূর শাসন প্রতিষ্ঠায় শেরশাহ শূরের ভূমিকা আলোচনা কর।

উত্তর: শেরশাহ শূর ছিলেন ভারতের অন্যতম খ্যাতনামা শাসক। বাংলায় স্বাধীন সুলতানি যুগের অবসান ঘটিয়ে তিনি ১৫৩৮ খ্রিষ্টাব্দে শূর শাসনের সূচনা করেন। শেষ সুলতান মাহমুদ শাহকে পরাজিত করে তিনি ক্ষমতা দখল করেন। সমগ্র ভারত দখলের উদ্দেশ্যে তিনি মুঘল সম্রাট হুমায়ুনের সাথে সংঘাতে জড়িয়ে পড়েন। চৌসার যুদ্ধে তিনি হুমায়ুনকে পরাজিত করে দিল্লির সিংহাসন অধিকার করেন। বাংলায় তার শাসনকাল দীর্ঘ না হলেও প্রশাসনিক সংস্কার, সড়ক নির্মাণ ও যোগাযোগব্যবস্থা উন্নত হয়। তাই শেরশাহ শূর বাংলার ইতিহাসে স্মরণীয়।

৮. বাংলায় মুঘল শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল কীভাবে?

উত্তর: বাংলায় মুঘল শাসন প্রতিষ্ঠিত হয় ১৫৭৬ খ্রিষ্টাব্দে। সম্রাট আকবর বাংলাকে সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত করতে চেয়েছিলেন। প্রথমে মুনিম খানকে সেনাপতি নিযুক্ত করে দাউদ কররাণির বিরুদ্ধে পাঠানো হয়। মুনিম খান তাণ্ডা দখল করে রাজধানী স্থাপন করেন। পরবর্তীতে রাজমহলের যুদ্ধে মুঘল সেনাপতি খান জাহান হুসেন কুলী খান দাউদ খান কররাণি ও তার মিত্রদের পরাজিত করেন। এর মাধ্যমে বাংলায় স্বাধীন সুলতানি শাসনের অবসান ঘটে এবং মুঘল সাম্রাজ্যের অধীনে আসে। রাজমহলের যুদ্ধকে বাংলায় মুঘল শাসনের সূচনাবিন্দু বলা হয়।

৯. ‘বার ভূঁইয়া’ বলতে কী বোঝ?

উত্তর: বার ভূঁইয়া ছিল বাংলার কিছু স্বাধীনপ্রিয় জমিদার বা ভূস্বামীদের সংগঠন। ষোড়শ শতক থেকে সপ্তদশ শতকের মধ্যবর্তী সময়ে তারা সক্রিয় ছিল। মুঘল সম্রাট আকবর বাংলায় পূর্ণ আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করতে না পারার প্রধান কারণ ছিল এদের প্রতিরোধ। প্রতিটি ভূঁইয়া তাদের নিজস্ব এলাকায় স্বাধীন শাসক হিসেবে ক্ষমতা চালাতেন। তাদের শক্তিশালী নৌবাহিনী ও সৈন্যদল ছিল। মুঘল সেনাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে তারা প্রায়শই একজোট হতেন। বাংলার স্বাধীনতার ইতিহাসে বার ভূঁইয়ারা এক গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায় সৃষ্টি করেছে।

See also  Food Adulteration Paragraph with Bangla Meaning (বাংলা অর্থসহ)

১০. বাংলায় মুঘল সাম্রাজ্য বিস্তারে মীর জুমলার ভূমিকা বর্ণনা কর।

উত্তর: মীর জুমলা ছিলেন আওরঙ্গজেবের আমলের একজন দক্ষ সুবাদার। তিনি ১৬৬০ থেকে ১৬৬৩ সাল পর্যন্ত বাংলার সুবাদার ছিলেন। তার সামরিক প্রতিভার স্বাক্ষর পাওয়া যায় কুচবিহার ও আসাম অভিযানে। তিনি প্রথমবারের মতো কুচবিহারকে মুঘল সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত করেন। এছাড়া আসাম অভিযানে সফল হয়ে সাম্রাজ্যের সীমান্তকে পূর্বদিকে বিস্তৃত করেন। যদিও অহম রাজাদের বিরুদ্ধে স্থায়ী সাফল্য পাননি, তবুও তার অভিযানে মুঘল কর্তৃত্ব বৃদ্ধি পায়। মীর জুমলার প্রশাসনিক দক্ষতা ও সামরিক অভিযাত্রা বাংলায় মুঘল আধিপত্য সুসংহত করতে বিশেষ ভূমিকা রাখে।

১১. সুবাদার শায়েস্তা খান বাংলায় ইংরেজদের প্রতি কী নীতি গ্রহণ করেছিলেন?

উত্তর: শায়েস্তা খান ছিলেন আওরঙ্গজেবের আমলের একজন শক্তিশালী সুবাদার। তার শাসনকালে বাংলায় পর্তুগিজ ও ইংরেজ ব্যবসায়ীরা ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করতে শুরু করে। প্রথমে তিনি ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিকে ব্যবসায় সুবিধা দিলেও পরে তাদের বাড়তি প্রভাব ও অবাধ আচরণের কারণে কঠোর নীতি নেন। তিনি চট্টগ্রামে আরাকানি জলদস্যুদের দমন করেন এবং ইংরেজদের কর্মকাণ্ড সীমিত করেন। ইংরেজরা একসময় মুঘল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ে এবং শায়েস্তা খান তাদের বাংলা থেকে সাময়িকভাবে বিতাড়িত করেন। এতে বোঝা যায়, তিনি বিদেশি শক্তিকে কখনও বাড়াবাড়ি করতে দেননি।

১২. নবাব কারা ছিলেন?

উত্তর: নবাব ছিলেন বাংলার প্রায় স্বাধীন শাসকগণ, যারা নামেমাত্র মুঘল সম্রাটের অধীন থাকলেও বাস্তবে স্বশাসিত ছিলেন। মুর্শিদ কুলী খান থেকে শুরু করে সিরাজউদ্দৌলা পর্যন্ত তারা বাংলার প্রশাসন পরিচালনা করেন। প্রথমে তাদের পদবি ছিল ‘নাজিম’, পরে তা নবাব নামে পরিচিত হয়। তারা রাজস্ব সংগ্রহ, সেনাবাহিনী নিয়ন্ত্রণ এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করতেন। দিল্লি দরবারে কেবল আনুগত্যের নামমাত্র স্বীকৃতি দেওয়া হতো। বাংলার রাজস্ব ব্যবস্থার উন্নয়ন, বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ এবং সামরিক শক্তি বৃদ্ধির কারণে নবাবরা প্রায় স্বাধীন শাসক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হন।

১৩. মুর্শিদ কুলী খান কে ছিলেন?

উত্তর: মুর্শিদ কুলী খান ছিলেন বাংলার প্রথম প্রকৃত নবাব। তিনি সম্রাট আওরঙ্গজেবের আমলে সুবাদার নিযুক্ত হয়ে আসেন। তিনি প্রশাসনিক দক্ষতার কারণে খুব অল্প সময়েই বাংলায় দৃঢ় নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেন। রাজস্ব ব্যবস্থায় তিনি ব্যাপক সংস্কার আনেন, রাজস্ব আদায়ে নতুন পদ্ধতি চালু করেন এবং রাজস্বের বড় অংশ দিল্লিতে পাঠানো বন্ধ করেন। তিনি মুর্শিদাবাদকে বাংলার রাজধানী ঘোষণা করেন, যা দীর্ঘদিন রাজধানী হিসেবে টিকে ছিল। তার আমলে বাংলার প্রশাসন সুশৃঙ্খল ও আর্থিকভাবে শক্তিশালী হয়ে ওঠে। এজন্য তাকে বাংলার নবাবি শাসনের প্রতিষ্ঠাতা বলা হয়।

১৪. আলীবর্দী খানের শাসনকাল সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা কর।

উত্তর: আলীবর্দী খান ছিলেন বাংলার একজন খ্যাতনামা নবাব। তিনি ১৭৪০ সালে মুর্শিদাবাদে ক্ষমতায় আসেন। তার শাসনকালের প্রধান বৈশিষ্ট্য ছিল মারাঠা আক্রমণ প্রতিহত করা। মারাঠারা একাধিকবার বাংলায় আক্রমণ চালিয়ে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। আলীবর্দী খান শক্ত হাতে এদের প্রতিহত করেন। তিনি অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা রক্ষায় সচেষ্ট ছিলেন এবং কৃষক ও প্রজাদের সুরক্ষায় পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। তবে তার শাসনকালে ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শক্তি ক্রমশ বাড়তে থাকে। দীর্ঘ ১৬ বছর শাসন শেষে তিনি ১৭৫৬ সালে মৃত্যুবরণ করেন। তার পরবর্তী উত্তরসূরি ছিলেন সিরাজউদ্দৌলা।

See also  পদার্থবিজ্ঞান ৯ম অধ্যায় সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর (SSC 2026)

১৫. সিরাজউদ্দৌলার পতনের কারণ ব্যাখ্যা কর।

উত্তর: সিরাজউদ্দৌলা ছিলেন বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব। তার পতনের প্রধান কারণ ছিল অভ্যন্তরীণ ষড়যন্ত্র ও ইংরেজদের কৌশল। নবাব হওয়ার পর তিনি অভিজাতদের বিরোধিতার মুখে পড়েন। মীরজাফর, জগতশেঠসহ অনেক প্রভাবশালী ব্যক্তি তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। ইংরেজদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেওয়ায় তারা আরও ক্ষুব্ধ হয়। ১৭৫৭ সালের প্লাসি যুদ্ধে মীরজাফরের বিশ্বাসঘাতকতার কারণে নবাব পরাজিত হন। ইংরেজদের সামরিক শক্তি তুলনামূলক দুর্বল হলেও অভ্যন্তরীণ ষড়যন্ত্র ও বিশ্বাসঘাতকতার ফলে সিরাজউদ্দৌলার পতন ঘটে। এতে বাংলার স্বাধীনতা হারায়।

১৬. প্লাসি যুদ্ধের গুরুত্ব কী ছিল?

উত্তর: ১৭৫৭ সালের প্লাসি যুদ্ধ বাংলার ইতিহাসে একটি যুগান্তকারী ঘটনা। এতে নবাব সিরাজউদ্দৌলা ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কাছে পরাজিত হন। এই যুদ্ধে মীরজাফরের বিশ্বাসঘাতকতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যুদ্ধের ফলাফলে বাংলার স্বাধীনতার অবসান ঘটে এবং ইংরেজরা বাংলার রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ লাভ করে। এটি শুধু বাংলাতেই নয়, সমগ্র ভারতের ইতিহাসে মোড় ঘুরিয়ে দেয়। ইংরেজরা ধীরে ধীরে ভারতের শাসক হয়ে ওঠার পথ তৈরি করে। তাই প্লাসি যুদ্ধকে ভারতবর্ষে ইংরেজ শাসনের সূচনা হিসেবে গণ্য করা হয়।

১৭. বাংলার সমাজ ও সংস্কৃতিতে সুলতানি যুগের প্রভাব আলোচনা কর।

উত্তর: সুলতানি যুগে বাংলার সমাজ ও সংস্কৃতিতে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আসে। ইসলাম প্রচারের জন্য মসজিদ, মাদ্রাসা, খানকাহ নির্মাণ করা হয়। ফলে ইসলামি শিক্ষা ও সংস্কৃতির প্রসার ঘটে। সাহিত্য ক্ষেত্রে মুসলিম কবি ও লেখকরা আবির্ভূত হন, যেমন— শাহ মুহাম্মদ সগীর। স্থাপত্যশিল্পে ইট ও চুন-সুরকি ব্যবহার করে দৃষ্টিনন্দন মসজিদ নির্মাণ হয়। পাশাপাশি হিন্দু-মুসলিম সংস্কৃতির মধ্যে মেলবন্ধন ঘটে। কৃষিভিত্তিক সমাজে নতুন নতুন বসতি স্থাপিত হয়। ফলে বাংলার সমাজ আরও সমৃদ্ধ ও বহুমাত্রিক হয়ে ওঠে।

১৮. বাংলার স্বাধীন সুলতানরা বাণিজ্যে কী ভূমিকা রেখেছিলেন?

উত্তর: বাংলার স্বাধীন সুলতানরা বাণিজ্যকে সমৃদ্ধ করতে বিশেষ ভূমিকা রাখেন। তারা বিদেশি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলেন এবং বন্দরনগরীগুলোতে বাণিজ্য প্রসার ঘটান। চট্টগ্রাম, সোনারগাঁও, গৌড় প্রভৃতি অঞ্চল আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের কেন্দ্র হয়ে ওঠে। রপ্তানি পণ্যের মধ্যে ছিল চাল, চিনি, সুতি কাপড়, সিল্ক ও মসলাজাতীয় দ্রব্য। আরব, পারস্য ও চীনদেশীয় ব্যবসায়ীরা বাংলায় আসতো। সুলতানরা শুল্ক আদায় করে রাজস্ব বৃদ্ধি করতেন। ফলে বাংলা অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ হয় এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলে পরিণত হয়।

১৯. বাংলার কৃষি ও অর্থনীতিতে নবাবদের অবদান কী ছিল?

উত্তর: নবাবরা বাংলার কৃষি ও অর্থনীতি উন্নত করার জন্য নানা পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। মুর্শিদ কুলী খান রাজস্ব আদায় ব্যবস্থায় সংস্কার আনেন এবং জমি মাপজোকের নিয়ম চালু করেন। কৃষকদের কাছ থেকে সরাসরি খাজনা আদায় করে দুর্নীতি কমানো হয়। বাংলার উর্বর মাটিতে ধান, পাট, সুতি ইত্যাদি ফসল উৎপাদন হতো। নবাবরা এ কৃষি উৎপাদনের উপর নির্ভর করে রাজস্ব আয় বাড়ান। পাশাপাশি তাঁতশিল্প, মসলিন ও সিল্কশিল্প উন্নত হয়। ফলে বাংলা তৎকালীন সময়ে সমৃদ্ধশালী ও স্বনির্ভর অর্থনীতির দেশ হিসেবে পরিচিত হয়।

২০. বাংলার ইতিহাসে নবাবি আমলের গুরুত্ব কী?

উত্তর: নবাবি আমল বাংলার ইতিহাসে একটি স্বতন্ত্র অধ্যায়। মুর্শিদ কুলী খান থেকে সিরাজউদ্দৌলা পর্যন্ত নবাবরা প্রায় স্বাধীনভাবে শাসন করেছেন। এই সময় বাংলার রাজস্ব, কৃষি, বাণিজ্য ও শিল্পকলা সমৃদ্ধ হয়। মুর্শিদাবাদ রাজধানী হিসেবে খ্যাতি অর্জন করে। তবে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব, মারাঠা আক্রমণ ও ইংরেজদের প্রভাব নবাবি শাসনকে দুর্বল করে তোলে। শেষ পর্যন্ত প্লাসি যুদ্ধের মাধ্যমে বাংলার স্বাধীনতার অবসান ঘটে। নবাবি আমল একদিকে সমৃদ্ধি, অন্যদিকে পতনের সূচনাবিন্দু। তাই বাংলার ইতিহাসে নবাবি যুগ বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top